মানুষের পাপ গোপন রাখার গুরুত্ব

                          মানুষের পাপ গোপন রাখার গুরুত্ব

                        
যারা পছন্দ করে যে,ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক,নিঃসন্দেহে ইহাকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ্ জানেন,তোমরা জানো না”। [সূরা আন-নূর; ২৪:১৯]

প্রিয় নবী (সা) আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন যার একটি হল অন্যের পাপ গোপন রাখা। আমাদের মাঝে কেউ যদি এমন কোন খারাপ কাজ করে বসে যা কিনা আল্লাহ্‌র আদেশ বিরুদ্ধ বা নৈতিক চরিত্র বিরুদ্ধ কিংবা অন্যের জন্য মর্যাদাহানিকর, সেক্ষেত্রে তার উচিৎ তা গোপন রাখা এবং কৃতকর্মের জন্য একান্ত নিভৃতে আল্লাহ্‌র কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা। প্রিয় নবী (সা) বলেছেন,
“আমার সমগ্র উম্মাহ্‌ নিরাপদ, কেবল তারা ব্যতীত যারা কিনা তাদের পাপ নিয়ে দম্ভ করে বেড়ায়। তাদের কেউ যখন কোন কুকর্ম করে রাতে ঘুমাতে যায় এবং আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সে বলতে থাকে, “এই শোন, আমি না কাল রাতে এই এই (কুকর্ম) করেছি”। সে যখন ঘুমাতে যাই, আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, আর সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ্ যা গোপন রেখেছিলেন তা সে লোকজনের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়”।[সহীহ আল বুখারী]

জায়িদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত,
“আল্লাহ্‌র রাসূল (সা) এর সময়ে এক লোক যখন স্বীকার করল যে, সে ব্যভিচার করেছে, তখন আল্লাহ্‌র রাসূল (সা) একটি চাবুক চাইলেন। যখন তাকে একটি ছেঁড়া/পুরানো চাবুক দেওয়া হল তিনি বললেন, “এটার চেয়ে ভাল নেই?” তখন একটি নতুন চাবুক আনা হলে তিনি বললেন, “এটার চাইতে একটু পুরাতন দেখে নিয়ে আস”। এরপর এমন একটা চাবুক আনা হল যেটা ছিল (ব্যবহারের ফলে) একটু পুরানো/নরম। তখন তিনি ওটা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে একশো দোর্‌রা মারার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেন, “হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্‌র সীমা অতিক্রম করোনা। কেউ এই ধরনের ঘৃণিত কোন অপরাধ (যেমন ব্যভিচার) করে বসলে, সে যেন তা গোপন রাখে, কারন কেউ যদি তা প্রকাশ করে বসে, তবে আমরা তার ব্যাপারে বর্ণিত শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র কিতাবের বিধান কার্যকর করব”। [মুসনাদ আহমদ]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত,
“একজন লোক রাসূল (সা) এর নিকট আসেলেন এবং বললেন:
“হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি মদিনার থেকে দূরবর্তী এক স্থানে এক মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং, আমাকে আমার প্রাপ্য শাস্তি দেন’। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তখন বললেন: ‘আল্লাহ্ তো তোমার পাপ গোপন রেখেছিল, তবে কেন তুমি তা গোপন রাখলেনা?’”  [সহীহ্‌ মুসলিম]
একইভাবে, যদি কেউ অন্যের পাপের কথা জেনে থাকে তবে তার উচিৎ তা গোপন রাখা। রাসূল (সা) বলেন:
“যে ব্যক্তি দুনিয়ায় একজন মুসলমানের একটা কষ্ট দূর করবে, হাশরের দিন আল্লাহ্ও তার একটা কষ্ট দূর করে দিবেন;  যে একজন ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্ত করবে, আল্লাহ্ তার দুনিয়া আর আখিরাত দুটোই সহজ করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, দুনিয়া আর আখিরাত দুই জায়গাতেই আল্লাহ্ তার দোষ গোপন রাখবেন।” [ সহীহ্‌ মুসলিম]
আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত,
“রাসূল (সা) একবার মীম্বরে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন, “হে লোকেরা, যারা কিনা ইসলামকে শুধুমাত্র মুখে গ্রহন করেছ কিন্তু অন্তরে ঈমান আননি এখনো, তোমরা মুসলমানদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাক, বিরত থাক তাদের ঠাট্টা করা থেকে, আর বিরত থাক তাদের ভুলত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে, কারন যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায় আল্লাহ্ও তার দোষ অন্বেষণ করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিবেন, এমনকি যদি নিভৃতে কোন এক গৃহকোণেও সংঘটিত হয়ে থাকে পাপটি।” [সহীহ্‌ আল জামী]
ইমাম আন-নাওয়াবী (রঃ) লিখেছেন, ‘এই হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র মুনাফিক আর দুর্বল ঈমানের লোকেরাই মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং তা প্রকাশ করে বেড়ায়… “
লজ্জা আর অপমানের ভয় অনেকসময় মানুষকে অনেক খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখে। হতে পারে এই ভয়টাই একদিন তাকে আল্লাহ্‌র দিকে নিয়ে যাবে, যখন সে তার ভুল বুঝতে পারবে এবং তার কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু যখন তার অপরাধ জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হয় তখন সেই ভয়টা আর তার মাঝে কাজ করে না । সে তখন ভাবতে থাকে, ‘কি হবে আর ভাল থেকে, ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে, লোকজন তো জেনেই গেছে ইতোমধ্যে’, তখন সে প্রাকাশ্যে পাপ কাজে লিপ্ত হতে থাকবে।
তাছাড়া বারবার পাপের কথা বলতে থাকলে মানুষের অন্তর থেকে পাপের ভয় দূর হয়ে যায়। তখন পাপকে আর পাপ বলে মনেই হয়না। যে পাপের কথা বলে বেড়াতে লজ্জাবোধ করেনা, একই পাপে লিপ্ত হওয়া তার জন্য অসম্ভব কিছু নয়। আর এভাবেই সমাজে পাপ ছড়িয়ে পড়তে থাকে!
তাই এক মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে পাপ করতে দেখলে তার উচিত তা গোপন রাখা। সেই পাপ প্রকাশ করে দিয়ে লোকজনকে পাপের দিকে ঠেলে দেওয়া তার পক্ষে সমীচীন নয়। আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে শুধুমাত্র গুনাহগারদেরকেই সতর্ক করেননি, যারা গুনাহের কথা বলে বেড়ায় তাদেরকেও সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
“যারা পছন্দ করে যে,ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক, নিঃসন্দেহে ইহাকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ্ জানেন,তোমরা জানো না”। [সূরা আন-নূর; ২৪:১৯]
সূরা আন-নিসা এর মধ্যে আল্লাহ্ বলেনঃ
“আল্লাহ্ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ্ শ্রবণকারী,বিজ্ঞ”। [সূরা আন নিসা, ৪:১৪৮]
ইবনে আব্বাস (রা) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
“আল্লাহ্ পছন্দ করেন না যে, আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বদ্‌দোয়া বা মন্দ বিষয় প্রকাশ করি, যদি না আমাদের উপর অন্যায় করা হয়। তবে যদি কারো উপর জূলূম করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌র অনুমতি রয়েছে। তারপরও এই ব্যপারে ধৈর্য ধারন করাই উত্তম।” [তফসীর ইবনে কাসীর]
সমাজে আজ এতো ব্যাপকভাবে পাপ ছড়িয়ে পড়ার কারন হল আমরা রাসূল (সা) এর দেওয়া শিক্ষার কথা ভুলে গেছি যার শিক্ষা ছিল নিজের আর অন্যের মন্দ বিষয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার। আজ সে কারনেই মানুষের অন্তর থেকে গুনাহের ভয় উড়ে গেছে- হোক সেটা ছোট গুনাহ্‌ বা বড় গুনাহ্‌। আরো ভয়ঙ্কর হল, মানুষ আজকাল তাদের নিজের পাপের কথা গর্বভরে প্রচার করতে পছন্দ করে! একবারও কি ভেবে দেখেছি কোথায় চলে গেছি আমরা!!
আজকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির নামে সমাজে কতভাবে যে পাপ ছড়িয়ে পড়ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। ইন্টারনেট, বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও-টেলিভিশনের প্রোগ্রামগুলোতে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ব্যভিচার, দুর্নীতি, বাটপারি আর মারামারি ছাড়া ভাল কোন খবরই পাওয়া যায়না আজকাল। মিডিয়া-যার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সবচাইতে বড় ভুমিকা রাখার কথা ছিল-তাই আজ সমাজে অন্যায়কে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করছে। কয়েকবছর আগেও আমরা যেসব অপরাধের কথা কল্পনা করতে পারতাম না, সেগুলোই আজ মিডিয়ার কল্যাণে নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে! তাই মুসলিম ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আসুন, মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এমন সকল পথ পরিহার করে চলি আমরা; বিরত থাকি নিজের বা অপরের দোষ প্রচার করা থেকে; পানাহ্‌ চাই আল্লাহ্‌র কাছে, আল্লাহ্ যেন আমাদের সকলকে এমন ঘৃণিত অপরাধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন।
ধৈর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান!
References: Lecture by Allama Ehsan Ilahi Zaheer (rahimahullah), Qawaaid wa-Fawaaid min al-Arabeen an-Nawawi by Shaikh Nathim Sultan, Tafseer Ibn Katheer, and others.
অনুবাদঃ মুনিমুল হক
সম্পাদনাঃ আবদ্‌ আল-আহাদ এবং শাবাব শাহরিয়ার খান

Share this:

ইসলামের দৃষ্টেতে হস্তমৈথুন

                                                                            ইসলামের দৃষ্টেতে হস্তমৈথুন
আল্লাহ তা’আলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে- যা পবিত্র কালামে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” -(আল- কুরআন, ৩৬:৬৫) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “ যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্যে জামিন হবো।” -(বুখারি, মিশকাত) উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, মানব দেহের এ দু’টো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজনক। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বেশীরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক অবস্i✔উ✔মi✔ লিঙ্গের হেফাজত করে অবয়িদ কোন প্রকারেই বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। অন্যত্র সহীহ হাদীস থেকে আরও প্রমানিত হয়ঃ “(একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন) হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে, তাদের বিবাহ করা উচিত। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যে বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত (কামভাব দমনের জন্য) রোযা রাখা।” -(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন। (১) ঐ খতদাতা ব্যক্তি, যে তার খতের মূল্য পরিশোধের চেষ্টা করে। (২) সে বিবাহিত যুবক, যে চরিত্রের হিফাজতের উদ্দেশে বিবাহ করে। (৩) সে মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” -(হাসানঃ আত-তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত) হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীইয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ “উত্তম চরিত্র হল পু্ন্য। আর যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকের কাছে প্রকাশ হওয়াকে তুমি পছন্দ কর না, তা হল পাপ।” -(মুসলিম, মিশকাত) অশালীন, অশোভনীয় ও অন্যায় কাজে মনে সঙ্কোচবোধ করার নাম হলো লজ্জা বা হায়া। যার লজ্জা নেই সে পারে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে। লজ্জা বা হায়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে । ” – [বুখারী ও মুসলিম] মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ “লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের খতিকারক দিক সমুহ:

ইসলামের দৃষ্টিতে এটা হারাম এবংকবীরা গুনাহ। শরীয়ত অনুযায়ী যারা
হস্তমৈথুন করে তারা সীমালংগনকারী ।শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে। পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান  যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হল
[১ ] পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে
ধীরে ধীরে নপুংসক (Impotent) হয়ে
যায়। অর্থাৎ যৌন সংগম স্থাপন করতে
অক্ষম হয়ে যায় ।[২] আরেকটি সমস্যা হল অকাল
বীর্যপাত। ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে
সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয় । বৈবাহিক
সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না ।[৩ ] অকাল বীর্যপাত হলে বীর্যে
শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায় । তখন বীর্যে
শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০মিলিয়নের কম ।।
যার ফলে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার
দেখা দেয় ।
(যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর
সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত ।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকেযদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয়না। )[৪ ] । অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষে যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয় ।Dr.Liu বলেন –
“There is a huge change in body
chemistry when one
masturbates excessively”
আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-
১ ) Nervous system, heart, digestive
system, urinary system এবং আরো
অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় । পুরো
শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ –
বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায় ।
২ ) চোখের ক্ষতি হয় ।৩ ) স্মরণ শক্তি কমে যায় ।৪ ) মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক
সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে।
৫ ) আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen। অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায়
যৌনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হয় । ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে
পারেন না ।মহান আল্লাহ্ তা’ আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে
হস্তমৈথুন।রসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের
মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুইপায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের)
নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব । ” –
(বুখারী ও মুসলিম)

ইসলামী গান ও কবিতায় ভ্রান্ত আকিদা

                                                                                       ইসলামী গান ও কবিতায় ভ্রান্ত আকিদা

  • ইসলামী গান ও
  • কবিতায় ভ্রান্ত
  • আক্বীদা
  • -মুহাম্মাদ আব্দুল হামীদ
  • সূচনা :
  • কুরআন মাজীদের আয়াত ও
  • হাদীছে নববী দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত
  • হয় যে, মানুষের ইবাদত ও সৎ আমল কবুল
  • হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ঈমান-
  • আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া। আর
  • তা হচ্ছে শিরক মুক্ত নির্ভেজাল
  • তাওহীদ ভিত্তিক আক্বীদা হওয়া।
  • নানা কারণে অনেক আগে থেকেই
  • বাংলাদেশের মুসলিম
  • সমাজে আক্বীদা ও
  • আমলে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
  • ফলে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ
  • ধর্মভীরু হওয়া সত্তেবও
  • আক্বীদা নির্ভুল না হওয়ার
  • কারণে পরকালীন
  • জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের
  • অন্তর্ভুক্ত হয়ে চলেছেন। তাই আমল
  • করার পূর্বে সঠিক আক্বীদা পোষণ
  • করা ও
  • তা ব্যাপকভাবে চর্চা করা প্রতিটি মুসলিমের
  • দায়িত্ব ও কর্তব্য।
  • দেশে প্রচলিত কতিপয় ভ্রান্ত
  • আক্বীদা :
  • বাংলাদেশের মুসলিম
  • সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত
  • আক্বীদা সমূহের প্রধান বিষয়
  • হচ্ছে আল্লাহর সত্তা এবং তাঁর নাম ও
  • গুণাবলী সম্পর্কে ভুল বিশ্বাস।
  • দ্বিতীয় বিষয়টি হ’ল মহানবী শেষ
  • নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে ভুল
  • ধারণা ও বিশ্বাস। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত
  • ভুল ধারণা ও বিশ্বাসের মূল
  • কারণগুলি নিম্নরূপ :
  • ১. দেশের ধর্মীয় ও সাধারণ
  • শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রমে কুরআন ও
  • ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সঠিক আকাইদ
  • শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকা।
  • ২. তাক্বলীদে শাখছী বা অন্ধ
  • ব্যক্তিপূজা। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
  • হাদীছে বর্ণিত সঠিক আক্বীদা গ্রহণ
  • না করে মাযহাবের দোহাই
  • দিয়ে তার অপব্যাখ্যা করা।
  • ৩. আলেম ও বক্তাদের
  • মুখে শোনা কথা বাছ-বিচার
  • না করে গ্রহণ করা ও তা প্রচার করা।
  • ৪. দলীল-প্রমাণ ছাড়া আলেমগণ
  • ধর্মীয় বই-পুস্তকে জাল-যঈফ বর্ণনা ও
  • ভিত্তিহীন বানোয়াট
  • কথা লিখে থাকেন। সাধারণ শিক্ষায়
  • শিক্ষিত কবি-সাহিত্যিকগণ আলেম
  • লেখকদের পদাংক অনুসরণ করে নিজ
  • রচিত কবিতা, ইসলামী গান ও গযল,
  • প্রবন্ধ
  • এবং সিরাতুন্নবী গ্রন্থে সেসব
  • ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচার করেন।
  • প্রসঙ্গ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য :
  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের
  • ক্রমবিকাশের ইতিহাসে কাব্য
  • সাহিত্যে ইসলামী ভাবধারা ও
  • ঐতিহ্য সৃষ্টিতে মুসলিম কবি-
  • সাহিত্যিকগণের অসামান্য অবদান
  • রয়েছে। বলতে গেলে মুসলিম
  • বাংলা সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয়
  • আমাদের প্রিয় নবী ও রাসূল হযরত
  • মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রশংসামূলক
  • নানা কথা নিয়ে। বিশেষ করে পুঁথি-
  • সাহিত্যের মাধ্যমে না‘ত বা রাসূল
  • প্রশস্তি ব্যাপক আকারে প্রকাশিত হয়।
  • ষোড়শ শতকের শেষার্ধ
  • থেকে মুসলিম কবিগণ মুহাম্মাদ
  • (ছাঃ)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক
  • নিয়ে কাব্য রচনা শুরু করেন। কিন্তু
  • লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, সেই শুরুকাল
  • থেকেই কবিগণ কাব্য রচনার
  • সূচনাতেই রাসূল (ছাঃ)-এর
  • প্রশস্তি গাইতে গিয়ে আবেগ
  • তাড়িত হয়ে অথবা জ্ঞানের
  • সীমাবদ্ধতার কারণে মুহাম্মাদ
  • (ছাঃ)-কে অতিমাত্রায়
  • ভক্তিভরে ‘অতিমানব’ অথবা আল্লাহর
  • ‘সমকক্ষ’ জ্ঞান করেছেন। বিশেষত
  • বাংলা কবিতা ও কাব্য
  • সাহিত্যে ‘নূরনবী’ প্রসঙ্গটি বারবার
  • উল্লেখ করা হয়েছে।
  • যেমন সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ
  • কবি সৈয়দ আলাওল তাঁর ‘পদ্মাবতী’
  • কাব্যের সূচনা করেছেন এভাবে-
  • ‘পূর্বেতে আছিল প্রভু নৈরূপ আকার।
  • ইচ্ছিলেক নিজ সখা করিতে প্রচার।
  • নিজ সখা মহাম্মদ প্রথমে সৃজিলা।
  • সেই যে জাতির মূলে ভূবন নিরমিলা।
  • তাহার পিরিতে প্রভু সৃজিল সংসার।
  • আপনে কহিছে প্রভু কোরান মাঝার।
  • [1]
  • এখানে কবি আল্লাহকে নিরাকার
  • সত্তা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অথচ
  • সঠিক আক্বীদা হল আল্লাহর আকার
  • আছে। তিনি নিরাকার নন। তবে তাঁর
  • সাথে অন্য কিছুর সাদৃশ্য নেই
  • (শূরা ৪২/১১) ।
  • কবি মুহাম্মাদ খান ‘মকতুল হুসেইন’
  • কাব্যের শুরুতে মহানবী (ছাঃ)-এর
  • প্রশস্তি এভাবে বর্ণনা করেছেন :
  • মুহাম্মাদ নবী নাম হৃদয়ে গাঁথিয়া
  • পাপীগণ পরিণামে যাইবে তরিয়া।
  • দয়ার অাঁধার নবী কৃপার সাগর
  • বাখান করিতে তার সাধ্য আছে কার।
  • যার প্রেমে মুগ্ধ
  • হইয়া আপে নিরঞ্জন
  • সৃষ্টি স্থিতি করিলেক এ চৌদ্দ ভূবন।
  • [2]
  • অষ্টাদশ শতকের কবি সৈয়দ
  • হামজা পুঁথিকাব্যে রাসূল
  • প্রশস্তি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
  • মোহাম্মদ নামে নবী সৃজন করিয়া
  • আপনার নূরে
  • তাঁকে রাখিলা ছাপাইয়া।[3]
  • আধুনিক বাংলা কাব্য
  • সাহিত্যে ‘নূরনবী’ প্রসঙ্গ :
  • মুসলিম জাগরণ ও
  • ইসলামী চেতনা সৃষ্টির
  • দিশারী রূপে আধুনিক বাংলা কাব্য-
  • সাহিত্যে কবি গোলাম
  • মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪), জাতীয়
  • কবি কাযী নজরুল ইসলাম
  • এবং কবি ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪)
  • স্মরণীয় হয়ে আছেন। ইসলাম ও মুসলিম
  • ঐতিহ্যের বিচিত্র রূপ
  • তাঁরা ইসলামী গান ও কবিতার মধ্য
  • দিয়ে সুনিপুণভাবে দক্ষ শিল্পীর মত
  • চিত্রিত করেছেন। তাঁদের অবদান
  • অনস্বীকার্য। তা সত্তেবও প্রচলিত
  • ভুল কথার অন্ধানুসরণ করে তাঁরাও ভুল
  • আক্বীদা কাব্যাকারে লিখে গেছেন।
  • এখানে কয়েকজন প্রথিতযশা কবির
  • লিখিত কবিতার কিছু চরণ উল্লেখ
  • করছি।
  • কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) :
  • কবি গোলাম মোস্তফা মুসলিম
  • নবজাগরণের কবি। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও
  • চিন্তাধারায় ইসলামী তাহযীব ও
  • তামাদ্দুন এবং মুসলিম ঐতিহ্যের
  • প্রকাশ ঘটেছে। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর
  • প্রতি গভীর অনুরাগ ও
  • ভালবাসা থেকেই তিনি ‘বিশ্বনবী’
  • রচনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন
  • বলে মনে হয়। কিন্তু
  • দুঃখজনকভাবে ‘বিশ্বনবী’
  • গ্রন্থে তিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-
  • কে ‘নূরের তৈরী নবী’
  • রূপে আখ্যায়িত
  • করে মিথ্যা কথা প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন
  • এবং বিশ্বনবীর সুমহান
  • মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছেন।
  • তাছাড়া তার রচিত না‘তে রাসূল-
  • নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি
  • আমার মুহাম্মাদ রাসূল,
  • আমার ….।
  • নূরের রবি যে আমার নবী
  • পূর্ণ করুণা ও প্রেমের ছবি
  • আমার …।[4]
  • তারপর আরো অগ্রসর হয়ে কবি গীত
  • রচনা করলেন এভাবে-
  • তুমি যে নূরের রবি
  • নিখিলের ধ্যানের ছবি
  • তুমি না এলে দুনিয়ায়
  • অাঁধারে ডুবিত সবি।
  • ইয়া নবী সালাম আলাইকা
  • ইয়া হাবীব সালাম আলাইকা
  • সালাওয়া তুল্লা আলাইকা।
  • চাঁদ সুরুয আকাশে আসে
  • সে আলোয় হৃদয় না হাসে
  • এলে তাই হে নব রবি
  • মানবের মনের আকাশে
  • ইয়া নবী সালাম আলাইকা
  • …..।
  • রাসূলকে ‘নূরনবী’ আখ্যায়িত
  • করে ভ্রান্ত আক্বীদাপূর্ণ উপরোক্ত
  • গীত কবিতাটি গীতিকার
  • কবি গোলাম মোস্তফা ও বিখ্যাত
  • কণ্ঠশিল্পী আববাস উদ্দীন আহমদ-এর
  • দ্বৈত কণ্ঠে কলিকাতায় তৎকালীন
  • গ্রামোফোন কোম্পানীতে রেকর্ড
  • হয়।[5] তৎপর তা ‘বাংলা মীলাদ’ নাম
  • ধারণ করে বাংলা মুলুকে ‘মৌলুদ’
  • অনুষ্ঠানে ‘কিয়াম’
  • কালে বাংলা ‘দরূদ ও সালাম’
  • রূপে পাঠ করার কিংবদন্তীর
  • মর্যাদা (?) অর্জন করেছে। আজও
  • বাংলা অঞ্চলের সর্বত্র
  • সমানভাবে নবীর উপর সালাম
  • পৌঁছানোর নামে বাংলা কবিতার
  • সুর মূর্ছনা মীলাদ প্রেমিকদের
  • হৃদয়তন্ত্রীতে ঝংকার তোলে।
  • ভাবতে অবাক লাগে, একজন
  • বাঙালী কবি রচিত গীত কবিতা দরূদ
  • ও সালাম রূপে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের
  • অংশ ও উপকরণে পরিণত
  • হ’তে পারে কিভাবে? এ দেশের
  • আলেমগণ কিভাবে দ্বীন ইসলামের
  • এই বিকৃতি চোখ
  • বুঁজে মেনে নিয়েছেন, সেটাই
  • প্রশ্ন।
  • কাযী নজরুল ইসলাম(মৃঃ বাংলা ১৩০৬/১৯৭৮ইং) :
  • জাতীয় কবি কাযী নজরুল ইসলাম
  • আমাদের গর্ব। তাঁর কবিতা,
  • ইসলামী গান ও গযল
  • এবং না‘তে রাসূল পাঠে আমরা মুগ্ধ
  • ও বিমোহিত হই। নবজাগরণে অনুপ্রাণিত হই।
  • আমরা নির্দ্বিধায়
  • বলতে পারি বাংলা কাব্য
  • সাহিত্যের বিশাল আঙিনায় তাঁর
  • রচিত ইসলামী কবিতা ও
  • না‘তে রাসূল নিজস্ব মহিমায় ভাস্বর
  • হয়ে আছে। তা সত্তেবও কবির
  • অনেক না‘তে রাসূল ও ইসলামী গান
  • ভুল আক্বীদায় কলুষিত হয়েছে।
  • নিম্নে কয়েকটি না‘তে রাসূলের
  • দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হ’ল-
  • ১. মুহাম্মাদ নাম যতই জপি ততই মধুর
  • লাগে
  • ঐ নামে এত মধু থাকে কে জানিত
  • আগে
  • মুহাম্মাদ নাম যতই জপি…..।
  • ২. আমার মুহাম্মাদ নামের ধেয়ান
  • হৃদয়ে যার রয়।
  • ৩. নাম মুহাম্মাদ বোলরে মন, নাম
  • আহমদ বোল।
  • ৪. মুহাম্মাদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই
  • আগে
  • তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান এতই
  • মধুর লাগে।
  • ৫. মুহাম্মাদ মোর নয়নমণি মুহাম্মাদ
  • নাম জপমালা
  • মুহাম্মাদ নাম শিরে ধরি, মুহাম্মাদ
  • নাম গলে পরি।[6]
  • ফররুখ আহমাদ (১৯১৮-১৯৭৪) :
  • বাংলা সাহিত্যের আধুনিক
  • কাব্যধারায় ইসলামের গৌরব
  • মহিমা পুনরুদ্ধার ও মুসলিম
  • পুনর্জাগরণের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার
  • শ্রেষ্ঠ রূপকার ছিলেন কবি ফররুখ
  • আহমদ। তাঁকে বলা হয় ‘মুসলিম
  • রেঁনেসার কবি’। সকল
  • জড়তা পায়ে দলে জেগে উঠার
  • হাতছানি রয়েছে তাঁর কাব্য ও
  • কবিতায়। এতদসত্তেবও সমাজের
  • চলমান ধ্যান-
  • ধারণা দ্বারা কবি কিছুটা বিচ্যুৎ-
  • বিভ্রান্ত হয়েছেন। যেমন
  • একটি না‘তে রাসূল
  • লিখতে গিয়ে কথিত ‘নূরনবী’
  • নামে ভ্রান্ত আক্বীদা তিনিও
  • প্রকাশ করেছেন এভাবে-
  • ওগো নূরনবী হযরত
  • আমরা তোমারি উম্মত।
  • তুমি দয়াল নবী,
  • তুমি নূরের রবি,
  • তুমি বাসলে ভাল জগত জনে
  • দেখিয়ে দিলে পথ।
  • আমরা তোমার পথে চলি
  • আমরা তোমার কথা বলি
  • তোমার আলোয় পাই যে খুঁজে
  • ঈমান, ইজ্জত।
  • সারা জাহানবাসী
  • আমরা তোমায় ভালবাসি,
  • তোমায় ভালবেসে মনে
  • পাই মোরা হিম্মত।[7]
  • বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম
  • দেশে সরকারীভাবে শিক্ষার
  • প্রাথমিক স্তরে শিশু-কিশোরদের
  • জন্য পাঠ্যপুস্তকে মহানবী (ছাঃ)
  • সম্পর্কে মারাত্মক এক
  • মিথ্যা আক্বীদা পরিবেশন করা খুবই
  • পরিতাপের বিষয়। মানব
  • জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব
  • অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। আজকের
  • শিশু-কিশোরগণ
  • আগামী দিনে মুসলিম সমাজের
  • কান্ডারী। শিশু-কিশোরদের মন
  • কাদামাটির মত কোমল। এ সময়
  • তাদেরকে যেমন খুশি তেমন
  • করে গড়ে তোলা যায়। এ সময়ের
  • শিক্ষা পাথরে খোদিত নকশার ন্যায়।
  • তাই শিক্ষার প্রাথমিক
  • স্তরে কোমলমতি কিশোর মনের
  • গহীন কোণে আমাদের প্রিয় রাসূল
  • মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে ভ্রান্ত
  • আক্বীদা-বিশ্বাস শিখিয়ে ‘বিষ
  • বৃক্ষের’ উপর তাদের অনাগত ভবিষ্যত
  • জীবনের ভিত রচনা করা হচ্ছে।
  • সরকার ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটির
  • সম্মানিত সদস্যগণের প্রতি আবেদন,
  • ভবিষ্যতে কোন কবিতা ও প্রবন্ধ
  • পাঠ্যপুস্তকের জন্য নির্বাচন করার
  • প্রাক্কালে ভুল-শুদ্ধ যাচাই-বাছাই
  • করবেন।
  • বিল্লালের গযল, চরমোনাইয়ের গযল,
  • আমার প্রিয় ইসলামী গান, শাহী গযল
  • প্রভৃতি নামকরণে বাজারে প্রচুর
  • ইসলামী গযলের বই-পুস্তক
  • পাওয়া যায়। এ সকল বই-পুস্তকে হাম্দ ও
  • না‘তের নামে আল্লাহ ও রাসূল
  • (ছাঃ) সম্পর্কে নানা প্রকার ভ্রান্ত ও
  • শিরক মিশানো আক্বীদা বিস্তার
  • লাভ করছে। স্কুল ও মাদরাসার
  • কচিকাঁচা বালক-বালিকারা সেইসব
  • বই থেকে গযল মুখস্থ
  • করে মীলাদুন্নবী-
  • সীরাতুন্নবী অনুষ্ঠানে, ওয়ায-
  • মাহফিলে গাইতে থাকে।
  • ওয়ায়েযীন ও বক্তাগণ
  • ইসলামী জালসায় সুর করে গযল
  • গেয়ে থাকেন। বিশেষ বিশেষ
  • দিবসে রেডিও
  • এবং টেলিভিশনে ধর্মীয়
  • অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে নামজাদা কণ্ঠ
  • শিল্পীগণ ইসলামী সঙ্গীত
  • পরিবেশন করেন। পথে-প্রাপ্তরে,
  • ফসলের মাঠে কৃষক-শ্রমিক কাজ
  • করতে করতে ইসলামী গান গায়।
  • নদীর বুকে নৌকার মাঝিরা এসব
  • গান গায়। কবি-সাহিত্যিকরা কেউ
  • বুঝে কেউ
  • না বুঝে সেগুলো লিখেছেন। মানুষ
  • তা কণ্ঠে তুলে নিয়ে দিবা-
  • রাত্রি গাইছে। কেউ বুঝে, কেউ
  • না বুঝে। সকলেই
  • নিজেকে তাওহীদী আক্বীদায়
  • বিশ্বাসী খাঁটি মুসলিম
  • বলে ধারণা করে। যদিও তার
  • কণ্ঠে গাওয়া সঙ্গীতটি তাকে ইসলাম
  • থেকে দূরে নিয়ে যায়।
  • আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ছাঃ)
  • সম্পর্কিত ভ্রান্ত আক্বীদার
  • বিষমিশ্রিত
  • কয়েকটি ইসলামী সঙ্গীতের দৃষ্টান্ত
  • নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
  • ১. নবী মোর পরশমণি, নবী মোর
  • সোনার খনি
  • নবী নাম জপে যে জন সেই
  • তো দোজাহানের ধনী।
  • নবী মোর নূরে খোদা তার তরে সকল
  • পয়দা
  • আদমের কলবেতে তারই নূরের
  • রওশনী…
  • নবী মোর পরশমণি, নবী মোর
  • সোনার খনি।[8]
  • প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্দুল আলীমের
  • কণ্ঠে এই সঙ্গীতটি সরকারী প্রচার
  • মাধ্যমে সর্বদাই প্রচারিত হয়।
  • গণমানুষের নিকট সঙ্গীতখানি খুবই
  • জনপ্রিয়। কিন্তু এর ভিতর এমন সব বিষয়
  • রয়েছে, যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
  • করলে শিরকে আকবর (বড় শিরক) হয়
  • এবং মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ
  • করে দেয়।
  • ২. সব মানুষের সেরা মানুষ
  • নবীজি আমার
  • নূরের বাতি দাও জ্বেলে দাও
  • নয়নে আমার।
  • তোমার দয়ার কাঙাল আমি
  • কাঁদি সারা দিবস যামী।
  • দূর কর দূর কর মনে মিটাও অাঁধিয়ার।[9]
  • ৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ
  • রাসুল
  • ……
  • নূরের নবী প্রেমের
  • ছবি নাইকো তাহার তুল,
  • ও ভাই নাইকো তাহার তুল
  • লা ইলাহা…..।[10]
  • ৪. দূর আরবে ফুটেছিল একটি নূরের ফুল
  • (২ বার)
  • সে ফুল আমার
  • কমলীওয়ালা রাসূলে মাকবুল
  • ……
  • নূর নবীজীর দরূদ
  • তাকে করে যে আকুল…
  • রাসূলে মাকবুল, আমার
  • রাসূলে মাকবুল।[11]
  • ৫. দিবা নিশি জপি আমি আল্লাহ
  • নবীর নাম
  • ঐ নামের গুণে পুরবে জানি (২ বার)
  • আমার মনস্কাম
  • আল্লাহ নবীর নাম
  • ……
  • ঐ নামে যে পরবে মালা, জীবন
  • হবে তার উজালা
  • …. আল্লা নবীর নাম।[12]
  • ৬. ডেকে লও রাসূলুল্লাহ,
  • রওজা পাকের কিনারে
  • আমি সহিতে পারি না বিরহ জ্বালা,
  • ধন্য কর দীদারে
  • আমি কেঁদে কেঁদে হইগো সারা,
  • ধন্য কর দীদারে।
  • আজো রওজায় শুয়ে থেকে হায়,
  • কাঁদেন তিনি উম্মাতের মায়ায়।[13]
  • ৭. নূরুন আলা নূর মুহাম্মাদ নূরের
  • খাজিনা
  • তোমার নূরের বদন
  • দেখতে আমি দেওয়ানা।
  • তোমার নূরে জগৎ জাহান
  • সৃজিয়াছেন আল্লাহ মহান
  • ……..
  • তোমার নূরের
  • লোভে লোভী তামাম দুনিয়া।
  • তোমার
  • নূরে পয়দা হয়ে ফেরেশতাদের
  • সিজদা লয়ে
  • পাইল তাজীম আদম নবী তারই
  • উছিলায়
  • তোমার নূরের তাজাল্লীর ঐ
  • ইশকে দেওয়ানা।[14]
  • -মাওলানা আ.জ.ম. অহিদুল আলম।
  • ৮. মরণকালে দিও
  • গো দেখা হে প্রিয় রাসূল আমায়
  • হৃদয় মাঝে তোমারি নাম
  • জপি সারাক্ষণ।[15]
  • ৯. নবী রাসূলকে মুর্দা বলে কোন
  • সে অবুঝ দল
  • ……
  • নবী রাসূলগণ কবর
  • শরীফে জিন্দা আছেন হায়
  • মূসা নবীকে একদা রাসূল নামাজ
  • হালে পায়।
  • মোদের নবী হায়াতুন্নবী আছেন
  • জিন্দা হালে
  • মোদের লাগি দোয়ায় রত আছেন
  • সাঁঝ সকালে।
  • উম্মতেরা করছে কি কাজ
  • নবী দেখতে পায়
  • সেই নবীকে মুর্দা বলা কাদের
  • শোভা পায়।
  • ……
  • মাযহাব মানা ফরজ বলে সঠিক
  • আলেমেরা
  • মাযহাব
  • যারা ছাড়িবে তারা হবে যে গোমরা
  • কোন বাতিল দল মাযহাব
  • মানে না মোদের জামানায়
  • সত্য আলোর
  • রশ্নি ছেড়ে অাঁধারে কাতরায়।[16]
  • …. মাঃ হায়দার হুসাইন
  • ১০. ও গো নবী সরোয়ার তুমি হাবীব
  • আল্লার
  • …….
  • সৃষ্টি করে নূরকে তোমার
  • অতি তাজীমে
  • সবার আগে রাখেন
  • খোদা আরশে আজীমে
  • সে পাক নূরেতে তোমার
  • গড়েন তামাম সংসার
  • সৃষ্টি হল আরশ, কুরসি, জমিন ও আসমান।
  • …..
  • পেলে দিদার প্রভুর
  • নূরে মিলে গেল নূর।[17]
  • -মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান।
  • ১১. সব নবীদের
  • সেরা তুমি আখেরী রাসূল,
  • ……..
  • পয়দা হল নিখিল জাহান
  • তোমারি পাক নূরে
  • ধরা হতে অাঁধার
  • কালো পালিয়ে গেল দূরে।[18]
  • – মাওলানা আ.জ.ম. ওবায়দুল্লাহ
  • ১২. নূর মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু সব নবীর
  • সুলতান
  • তুমি লাহুতের মেহমান,
  • ………….
  • চাঁদ-সুরুজে তোমার দ্যুতি
  • গ্রহ তারায় তোমার জ্যোতি
  • আরশ ফালাক সকল তোমার
  • নূরেতে রৌশন।[19]
  • -মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান।
  • জনৈক কবি লিখেছেন,
  • আকার কি নিরাকার সেই রববানা
  • আহমদ আহাদ বিচার হলে যায় জানা
  • আহমদ নামেতে দেখি
  • মিম হরফে লেখেন নবী
  • মিম গেলে আহাদ বাকী
  • আহমদ নাম থাকে না।
  • আরেকজন কবি লিখেছেন,
  • আহমদের ঐ ‘মিম’-এর পর্দা
  • উঠিয়ে দেখরে মন
  • দেখবি সেথা বিরাজ করে
  • আহাদ নিরঞ্জন।[20]
  • একজন মুসলিম গীতিকারের রচিত
  • কথিত ভক্তিমূলক গান দেশের
  • বিখ্যাত
  • কণ্ঠশিল্পীরা সরকারী প্রচার
  • মাধ্যমে সর্বদাই গেয়ে থাকেন। যার
  • কথাগুলি খুবই আপত্তিজনক।
  • কথাগুলি হ’ল-
  • ছায়া বাজি পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ
  • যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের
  • কি দোষ
  • তুমি হাকিম হইয়া হুকুম কর,
  • পুলিশ হইয়া ধর
  • সর্প হইয়া দংশন কর
  • ওঝা হইয়া ঝাড়।
  • তুমি মার তুমি বাঁচাও
  • তুমি খাওয়াইলে আমি খাই, আল্লাহ…
  • এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
  • এত যত্নে গড়াইলেন সাঁই
  • এই যে দুনিয়া……।
  • হিন্দু ধর্মাবলম্বী পন্ডিত শ্রীমৎ
  • শংকরাচার্য্য অদ্বৈতবাদ মতবাদ
  • প্রচার করেছেন। যার সারকথা হ’ল
  • সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি অভিন্ন বস্ত্ত।
  • জগতে যা কিছু বিদ্যমান তার সবকিছুই
  • স্রষ্টার অংশ বিশেষ। যার আরেক নাম
  • সর্বেশ্বরবাদ। যার অর্থ সব জড় ও জীব
  • জগতের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব
  • আছে। এই বিশ্বাস থেকেই
  • হিন্দুরা সকল সৃষ্ট বস্ত্তর পূজা করার মধ্য
  • দিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করার
  • দাবী করে।
  • খৃষ্টানরা দাবী করে যে, ঈশ্বর
  • সর্বপ্রথম তার নিজের ‘যাত’
  • বা সত্তা থেকে ‘কালেমা’ বা পুত্র
  • যীশু খৃষ্টকে সৃষ্টি করেন এবং তার
  • থেকে সকল
  • সৃষ্টিকে তিনি সৃষ্টি করেন। খৃষ্ট
  • ধর্মের ‘সৃষ্টিতত্ত্বের’ আদলে সপ্তম
  • হিজরী শতকের ছূফী মহিউদ্দীন ইবনুল
  • আরাবী (৫৬০-৬৩৮ হিঃ) বলেন,
  • ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম ‘নূরে মুহাম্মাদী’
  • সৃষ্টি করেন এবং তার থেকে সকল
  • সৃষ্টি জগতকে পয়দা করেন। জাবির
  • (রাঃ)-এর নাম জড়িয়ে- ‘সর্বপ্রথম
  • আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার নূর
  • থেকে সৃষ্টি করেন’- এই
  • মিথ্যা কথাটি সর্বপ্রথম ইবনুল
  • আরাবী তার রচিত বই-
  • পুস্তকে ‘হাদীছ’ নাম দিয়ে উল্লেখ
  • করেন।[21]
  • আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে,
  • হিন্দু ধর্মের ‘অদ্বৈতবাদ’, খৃষ্টান
  • ধর্মের ‘বহু ঈশ্বরবাদ’ এবং ইবনুল
  • আরাবী উদ্ভাবিত মুসলমানদের
  • ‘নূরে মুহাম্মাদী তত্ত্ব’-এর
  • মধ্যে কোনই প্রভেদ নেই।
  • বরং চমৎকার মিল রয়েছে। তিন
  • ধর্মের তিনটি মতবাদের মৌলিক
  • কথা একটিই। আর তা হচ্ছে জগতের
  • সকল সৃষ্টিই হিন্দুর ‘ঈশ্বর’, খৃষ্টানের
  • ‘খোদা’ এবং মুসলমানের ‘আল্লাহর’
  • সত্তা থেকে সৃজিত হয়েছে।
  • ‘আল্লাহর নূরে নবী পয়দা, নবীর
  • নূরে জগত পয়দা’ যার সংক্ষিপ্ত রূপ
  • ‘নূরনবী’, এই বচন যারা হাদীছ
  • নামে প্রচার করেন এবং এ
  • আক্বীদা পোষণ করেন তাদের কথার
  • অর্থ দাঁড়ায় যে, ‘আল্লাহর সত্তা’
  • বা ‘যাত’ একটি ‘নূর’ বা নূরানী বস্ত্ত
  • এবং আল্লাহ স্বয়ং নিজের সেই
  • যাতের বা ‘সত্তার’ অংশ থেকে তাঁর
  • নবীকে পয়দা করেছেন
  • (নাঊযুবিল্লাহ) । অথচ আল্লাহ
  • তা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
  • গুরুত্বের সাথে বিবেচনার
  • দাবী রাখে যে, কোন হাদীছ
  • গ্রন্থেই ছহীহ, যঈফ, হাসান কোন
  • সূত্রেই রাসূল (ছাঃ)
  • থেকে তিনি ‘নূর নবী’ বা ‘নূর
  • দ্বারা তৈরী’ এমন একটি হাদীছও
  • বর্ণিত হয়নি। হিজরী সাতশত
  • শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত ছাহাবী,
  • তাবেঈ, তাবে তাবেঈ,
  • সালাফে ছালেহীন, চার ইমাম সহ
  • কোন মুসলিম আলেম ‘নূরনবী’
  • সংক্রান্ত কিছুই জানতেন না।
  • যদি তাঁরা জানতেন তাহ’লে অবশ্যই
  • ইতিহাস ও সীরাত
  • গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ করে যেতেন।
  • কিন্তু তা নেই। এমনকি ইসলামের
  • ইতিহাসের প্রথম পাঁচশত বছরে কোন
  • দল-উপদল বা বাতিল ফের্কার পক্ষ
  • হ’তেও ‘নূর নবী’ বিষয়ক কিছু
  • আলোচিত হয়নি।
  • কিন্তু বিচিত্র এই দেশ। বিচিত্র এ
  • দেশের মানুষ। কবির ভাষায়- এমন
  • দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক
  • তুমি…। সব সম্ভবের এই
  • দেশে কে শোনে কার কথা।
  • প্রমাণবিহীন বাংলা বই-পুস্তক আর
  • ওয়ায-মাহফিলে বক্তাদের
  • মুখে শোনা কথার উপর নির্ভরশীল
  • হয়ে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী,
  • গীতিকার সকলেই বিভ্রান্ত
  • আক্বীদায় বিশ্বাস স্থাপন
  • করে বা না করে অভ্যাসগত শিরকের
  • পঙ্কিলে আটকে গেছে। যার শেষ
  • পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ আল্লাহ
  • শিরকের ফলাফল
  • সম্পর্কে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ
  • করে বলেছেন, ‘যদি তারা শিরক
  • করে তাহ’লে তাদের আমল সমূহ নষ্ট
  • হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/৮৮) ।
  • সঠিক আক্বীদা :
  • ইহুদীরা ওযায়ের (আঃ),
  • খৃষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও আরবের
  • মুশরিকরা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল
  • (আঃ) সম্পর্কে অতি ভক্তি ও
  • বাড়াবাড়ি করে শিরকে নিপতিত
  • হয়েছিল। এজন্য পবিত্র কুরআন ও
  • হাদীছে আবদিয়াত (বান্দা),
  • বাশারিয়াত (মানবত্ব), গায়েবি খবর
  • সম্পর্কে না জানা প্রভৃতি বিষয়ে বারবার
  • আলোচনা করা হয়েছে।
  • যাতে ঈমানদারগণ রাসূলের আনুগত্য ও
  • ভালবাসার পাশাপাশি তাঁর
  • প্রতি অতি ভক্তি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে।
  • মহান আল্লাহ তাঁর প্রেরিত রাসূলের
  • পরিচিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘বল,
  • আমি তোমাদের মতই মানুষ; আমার
  • প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ
  • একমাত্র ইলাহ’ (হামীম সাজদা ৪১/৬) ।
  • রাসূল (ছাঃ) নিজেই নিজের
  • বৈশিষ্ট্য পেশ করে বলেছেন,
  • ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন
  • মানুষ। আমি ভুলে যাই,
  • যেমনভাবে তোমরা ভুলে যাও।
  • সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ
  • করিয়ে দিবে’।[22] সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য
  • সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায়
  • রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সকল
  • ফেরেশতা নূর থেকে এবং জ্বিন
  • জাতিকে আগুন
  • থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর
  • আদমকে (মানব জাতি)
  • সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সব ছিফাত
  • দ্বারা, যে ছিফাতে তোমাদের
  • ভূষিত করা হয়েছে (অর্থাৎ মানব
  • জাতিকে মাটি ও
  • পানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে)।[23]
  • এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
  • কেবলমাত্র ফেরেশতাগণ ‘নূর’-এর
  • তৈরী। মানব জাতি কিংবা তার মধ্য
  • হ’তে নবী-রাসূলগণ নূরের তৈরী নয়।
  • আলেমগণের উচিত, পবিত্র কুরআনের
  • আয়াত ও ছহীহ হাদীছগুলির উপর
  • নির্ভর করা এবং সেই মুতাবিক সঠিক
  • ও বিশুদ্ধ আক্বীদা গ্রহণ ও প্রচার করা।
  • সঠিক আক্বীদা গ্রহণের
  • কথা বলা হ’লে যদি আপনি বলেন,
  • ‘এগুলি ওহাবীদের কথা। ওহাবীদের
  • নিকট
  • থেকে আক্বীদা শিখতে হবে না।
  • এদেশে ইসলাম প্রচার
  • করেছে ওলী-আউলিয়াগণ। এতদিন
  • পর ওহাবীরা এসেছে নতুন
  • করে আক্বীদা শিখাতে’? এসব
  • উক্তি করে আপনি নিজেকে দলীয়
  • সংকীর্ণতার কুটিল
  • পঙ্কিলে নিমজ্জিত করলেন। পবিত্র
  • কুরআনের আয়াত ও রাসূল (ছাঃ)-এর
  • হাদীছ ‘ওহাবী’ অথবা ‘সুন্নী’ এ রকম
  • বিভাজন করে বর্ণিত হয়নি।
  • এক্ষেত্রে আপনি ঈমানদার কি-
  • না সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
  • বিদ‘আতী ও কুফরী আক্বীদা-আমল
  • সমর্থন
  • করা হ’লে তিনি পাক্কা ‘সুন্নী’। আর
  • তার
  • বিরোধিতা করলে কা‘বা মসজিদের
  • ইমাম ছাহেব হ’লেও তিনি ওহাবী।
  • কি চমৎকার অভিধা! এসব
  • গোঁড়ামি ছেড়ে পরকালীন
  • নাজাতের লক্ষ্যে সকলকে কুরআন ও
  • হাদীছে বর্ণিত ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ
  • করতে হবে। ভ্রান্ত আক্বীদা ও
  • শয়তানী পথ ছাড়তে হবে।
  • এছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।
  • উপসংহার :
  • বাংলা ভাষায় রচিত কাব্য ও
  • কবিতায়, গযল ও গানে আল্লাহ ও
  • রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে ভ্রান্ত
  • আক্বীদা আবহমান কাল
  • থেকে প্রচার হয়ে আসছে। প্রচলিত
  • শত শত গযল ও ইসলামী সঙ্গীতের মধ্য
  • থেকে কয়েকটি মাত্র দৃষ্টান্ত স্বরূপ
  • উল্লেখ করা হয়েছে। সকল দলীয়
  • সংকীর্ণতার
  • ঊর্ধ্বে থেকে পরকালীন
  • মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে অতীতের ভুল
  • সংশোধন করে নেওয়া মুমিনের
  • দায়িত্ব ও কর্তব্য।
  • আসুন! সে লক্ষ্য
  • সামনে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
  • প্রতি আমাদের দায়-দায়িত্ব পালন
  • করি। নির্ভুল আক্বীদা প্রতিষ্ঠায়
  • পারস্পরিক সহযোগিতা দান করি।
  • আল্লাহ তাওফীক দান করুন- আমীন!
  • সহকারী অধ্যাপক, ফজিলা রহমান
  • মহিলা কলেজ, কৌরিখাড়া,
  • পিরোজপুর।
  • [1] . মুহাম্মদ শাহাব উদ্দীন, সাহিত্য
  • সাধনায় কয়েকজন মুসলিম
  • প্রতিভা (ঢাকা : ইসলামিক
  • ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ডিসেম্বর
  • ২০০৪), পৃঃ ১৭।
  • [2] . ঐ, পৃঃ ১৮।
  • [3] . তদেব।
  • [4] . ঐ, পৃঃ ৩৪।
  • [5] . ঐ, পৃঃ ৩৫।
  • [6] . ঐ, পৃঃ ২০।
  • [7] . বাংলা সহজপাঠ, পঞ্চম শ্রেণী,
  • বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড,
  • ঢাকা, পুনর্মুদ্রণ: নভেম্বর, ২০১২,
  • পৃঃ ৯৬-৯৭; ইসলাম ও নৈতিক
  • শিক্ষা ৪র্থ শ্রেণী, জাতীয়
  • শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক
  • বোর্ড,ঢাকা।
  • [8] . ডাঃ এম.এ. সামাদ, আমার প্রিয়
  • ইসলামী গান, পৃঃ ৭৮, প্রথম প্রকাশ :
  • মার্চ ২০০৫। প্রকাশক : সাহিত্য
  • সোপান, বগুড়া।
  • [9] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১৪।
  • [10] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১০।
  • [11] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭১।
  • [12] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৭।
  • [13] . শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ
  • জাগরণী, পৃঃ ১৭;
  • ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী,
  • নেছারাবাদ, পিরোজপুর।
  • [14] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৭।
  • [15] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৯।
  • [16] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৭।
  • [17] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৭।
  • [18] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬২।
  • [19] . প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭০।
  • [20] . মোঃ আবু তাহের বর্ধমানী,
  • অধঃপতনের অতল তলে, পৃঃ ৬৪।
  • [21] . ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ
  • জাহাঙ্গীর, হাদীসের
  • নামে জালিয়াতি, পৃঃ ২৫৯ তৃতীয়
  • প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০০৮।
  • [22] . ছহীহ বুখারী হা/৪০১।
  • [23] . মুসলিম; মিশকাত হা/৫৭০১।

পুরুষের জন্য সিল্ক /রেশমী, হলুদ ও লাল কাপড় পড়া নিষেধঃ

                                                 পুরুষের জন্য সিল্ক /রেশমী, হলুদ ও লাল কাপড় পড়া নিষেধঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।  হলুদ,লাল রঙ্গ ও রেশমি পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম, বিস্তারিত হাদিস দেখুনঃ  ঈদ উপলক্ষে ছেলেদের পোশাকের  দোকানগুলোতেই ভীড় কম থাকে না।তবে  পোশাকের ব্যাপারে আমাদের একটু সচেতন হওয়া দরকার।পছন্দের তালিকার শীর্ষে স্থান পায় সিল্কের পাঞ্জাবী।ছোট থেকে বড়, বড় থেকে বুড়ো সব বয়সের পুরুষদের প্রায়ই দেখা যায় সিল্কের পাঞ্জাবী পরতে।  কিন্তু আমরা হয়ত জানি বা না জেনে সিল্কের  পোষাকের দিকে ঝুকি।কিন্তু পুরুষের জন্য তো সিল্ক হারাম করা হয়েছে।আলী (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ)  আমাকে একজোড়া রেশমী কাপড় দিলেন।আমি তা পরিধান করলাম। তার মুখমণ্ডলে গোস্বার ভাব দেখতে পেয়ে আমি আমার মহীলাদের মাঝে তা ভাগ করে দিয়ে দিলাম।বুখারিঃ২৬১৪ ইঃফাঃ২৪৩৯ আহমাদঃ ১১৭১ আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাঃ) কে  দেখেছি, তিনি ডান হাতে রেশম  ধরলেন এবং বাম হাতে সোনা, অতঃপর  বললেন, আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ  দু’টি বস্তু হারাম।’’  আবু দাউদঃ ৪০৫৭, নাসায়িঃ ৫১৪৪, ইবন  মাজাহঃ৩৫৯৫  রসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, আমার  উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি  হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও  বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।  সহীহ বুখারীঃ ৫৫৯০  পুরুষদের জন্য হলুদ ও লাল জামা পরার  ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা  এসেছে। লাল ও হলুদ রঙ পুরুষদের জন্য  এই কালারের পাঞ্জাবিও এড়িয়ে চলতে হবে।  রসুলুল্লাহ( সাঃ) আলি (রাঃ) কে দুইটি হলুদ  রঙয়ের কাপড় পরা অবস্থায় দেখলেন।  তিনি তখন বলেন, এই রঙ কাফেরদের  জন্য, এই রঙের কাপড় পরিধান করো না।  মুসলিমঃ ২০৭৭ উমার(রাঃ) বলেন,রসুলুল্লাহ (সাঃ)আমাদেরকে লাল রঙের পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন।  (মুসনাদে আহমাদ,ইবনে মাজাহঃ ৩৫৯১)  তবে শুধু এক কালারের লাল না হয়ে যদি  লালের মাঝে অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক  থাকে তাহলে সেটা পরা জায়েজ আছে।  তবে অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক থাকলেও  তাকওয়ার খাতিরে লাল রঙ এড়িয়ে  চলাই উত্তম।তাই পোশাকের ব্যাপারে আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। মাসুক আহমেদ

ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করার বিধান কি?

ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করার বিধান কি?
###############ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করার বিধান কি?###################
আমাদের দেশে ইনস্যুরেন্স বা বীমা কোম্পানিগুলো অধিকাংশই বাণিজ্যিক, যা সবই প্রতারণা ও সুদ নির্ভর। তাই এ সকল কোম্পানিতে চাকুরী করা বা তাতে অর্থ লগ্নি করা হারাম।
আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এবং সউদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, সব ধরণের বাণিজ্যিক বীমা হারাম। চাই তা জীবন বীমা হোক বা সম্পদের বীমা হোক।
তার কারণ সমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল:
প্রথমত: বাণিজ্যিক জীবন বীমা হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যাতে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। কিন্তু তাতে আছে কঠিন ধোঁকার সম্ভাবনা। কেননা বীমাকারীর পক্ষে চুক্তির সময় একথা জানা সম্ভব নয় যে, কি পরিমাণ অর্থ সে প্রদান করবে এবং কি পরিমাণ গ্রহণ করবে। এমনও হতে পারে যে, সে হয়তো এক বা দু কিস্তি অর্থ প্রদান করল এবং তারপরেই কোন দুর্ঘটনা ঘটল। তখন বীমা কর্তৃপক্ষ শর্ত অনুযায়ী বিরাট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। হতে পারে কোন দুর্ঘটনাই ঘটল না। তখন বীমাকারী সকল কিস্তি পরিশোধ করতেই থাকবে। অথচ বেঁচে থাকতে সে শেষে কিছুই পাবে না; তার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিছগণ পাবে।
সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বাই গারার’বা প্রতারণা ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে নিষেধ করেছেন।(মুসলিম)
দ্বিতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমা মূলত: এক ধরণের জুয়া। কেননা এখানে অর্থ আদান-প্রদানে ঝুঁকি ও প্রতারণার সুযোগ আছে। বিনা অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ আছে আবার বিনা প্ররিশ্রমে ও বিনিময় ছাড়াই অধিক লাভবান হওয়ারও সুযোগ আছে। কেননা বীমাকারী কয়েক কিস্তি দেয়ার পর কোন দুর্ঘটনায় পতিত হল, তখন কর্তৃপক্ষ বীমার যাবতীয় অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে, ফলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি কোন দুর্ঘটনা না ঘটে তবে কর্তৃপক্ষ বীমার কিস্তির মাধ্যমে লাভবান হতেই থাকবে। অথচ তাদের এই লাভ বিনিময় ছাড়াই হচ্ছে। অতএব এখানে যখন অজ্ঞতা সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তখন তা নিষিদ্ধ জুয়ার পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ কুরআনে জুয়াকে হারাম করেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য ব্যতীত অন্য কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (মায়েদাঃ ৯০)
তৃতীয়ত: বাণিজ্যিক বীমায় তাৎক্ষণিক ও বিলম্বে সুদের ব্যবস্থা আছে। কেননা বীমা কোম্পানি গ্রাহককে বা তার উত্তরাধিকারকে বা অনুমোদিত ব্যক্তিকে জমা কৃত অর্থের চেয়ে বেশী প্রদান করবে, ফলে তা তাৎক্ষণিক সুদের পর্যায়ভুক্ত গণ্য হবে। আর এই প্রদানটি নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেয়ার কারণে তা বিলম্ব সুদেরও অন্তর্ভুক্ত হবে। আর উভয় প্রকার সুদ হারাম।
চতুর্থত: বাণিজ্যিক বীমা নিষিদ্ধ বাজির অন্তর্ভুক্ত। কেননা উভয় ক্ষেত্রে (বীমা ও বাজিতে) অজ্ঞতা, ধোঁকা ও জুয়ার সুযোগ আছে। আর ইসলামের উপকার ও সহযোগিতার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে বাজি ধরাকে শরীয়ত নিষেধ করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজি ধরার বৈধতাকে শুধু তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন,
“উট ও ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা এবং তীর নিক্ষেপ ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে বাজী ধরা চলবে না।” (আবু দাউদ)
পঞ্চমত: বাণিজ্যিক বীমার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ বিনিময় ব্যতীত অর্জন করার সুযোগ আছে। আর বাণিজ্যিক চুক্তিতে বিনিময় ছাড়া অর্থ উপার্জন হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।” (নিসাঃ ২৯)
ষষ্ঠত: বাণিজ্যিক বীমায় এমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়, শরীয়তে যা বাধ্য করা হয়নি। এই চুক্তিতে বীমা কর্তৃপক্ষ থেকে কোন দুর্ঘটনা আসেনি বা দুর্ঘটনার কোন কারণও হয়নি, তবু শুধু বামী কারীর সাথে চুক্তির কারণে ‘দুর্ঘটনা হতে পারে’এমন অনুমানের ভিত্তিতে বিমাকারীর কিছু অর্থের বিনিময়ে তাকে অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে। এই জন্য এটা হারাম লেনদেন।
ইসলামী শরীয়ত মানুষকে হালাল ভাবে অর্থ উপার্জন ও খরচ করতে যেমন আদেশ করেছে, তেমনি সকল প্রকার হারাম উপার্জনকে বর্জন করতে কঠোরভাবে তাগিদ দিয়েছে। অন্যতম হারাম উপার্জন হচ্ছে সুদ, যা বিশেষভাবে এই বাণিজ্যিক বীমায় প্রদান করা হয়। এই সুদকে শরীয়ত যেমন হারাম করেছে, তেমনি সুদের সাথে জড়িত সকলকেই অপরাধী সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ বলেন,
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (বাকারাঃ ২৭৫)
عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
জাবের রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত করেছেন তার উপর যে সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদ লেখে এবং সুদের ব্যাপারে যারা সাক্ষী থাকে। তারা সকলেই সমান অপরাধী।” (মুসলিম)
অনুবাদক: আবদুল্লাহ আল কাফী (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

ভীষণ সুন্দর একটি কাহিনী শুনলাম, শুনে চোখ দিয়ে পানি চলে আসল...

ভীষণ সুন্দর একটি কাহিনী শুনলাম, শুনে চোখ দিয়ে পানি চলে আসল...
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবা, নাম থা’লাবা (Tha’laba, বাংলায় অনেক সময় সা’লাবা বলা হয়)। মাত্র ষোল বছর বয়স। রাসূল (সা) এর জন্য বার্তাবাহক হিসেবে এখানে সেখানে ছুটোছুটি করে বেড়াতেন তিনি। একদিন উনি মদীনার পথ ধরে চলছেন, এমন সময়
একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখ পড়ল দরজা খুলে থাকা এক ঘরের মধ্যে। ভিতরে গোসলখানায় একজন মহিলা গোসলরত ছিলেন, এবং বাতাসে সেখানের পর্দা উড়ছিল, তাই থা’লাবার চোখ ঐ মহিলার উপর যেয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে উনি দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন।

কিন্তু থা’লাবার মন এক গভীর অপরাধবোধে ভরে গেল। প্রচন্ড দুঃখ তাকে আচ্ছাদন করল। তার নিজেকে মুনাফিক্বের মত লাগছিল। তিনি ভাবলেন, ‘কিভাবে আমি রাসূল (সা) এর সাহাবা হয়ে এতোটা অপ্রীতিকর কাজ করতে পারি?! মানুষের গোপনীয়তাকে নষ্ট করতে পারি? যেই আমি কিনা রাসূল (সা) এর বার্তা বাহক হিসেবে কাজ করি, কেমন করে এই ভীষণ আপত্তিজনক আচরণ তার পক্ষে সম্ভব?’ তাঁর মন আল্লাহর ভয়ে কাতর হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, ‘না জানি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমার এমন আচরণের কথা রাসূল সা এর কাছে প্রকাশ করে দেয়!’ ভয়ে, রাসূল (সা) এর মুখোমুখি হওয়ার লজ্জায়, তিনি তৎক্ষণাৎ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে গেলেন।

এভাবে অনেকদিন চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সাহাবাদের কে থা’লাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই থাকতেন। কিন্তু সবাই জানাল কেউ-ই থা’লাবা কে দেখেনি। এদিকে রাসূল সা এর দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছিল। তিনি উমর (রা), সালমান আল ফারিসি সহ আরো কিছু সাহাবাদের পাঠালেন থা’লাবার খোঁজ আনার জন্য। মদীনা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও থা’লাবার দেখা মিলল না। পরে মদীনার একেবারে সীমানাবর্তী একটা স্থানে, মক্কা ও মদীনার মধ্যখানে অবস্থিত পর্বতময় একটা জায়গায় পৌঁছে কিছু বেদুঈনের সাথে দেখা হল তাদের। দেখানে এসে তারা থা’লাবার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করলেন। ‘তোমরা কি লম্বা, তরুণ, কম বয়সী একটা ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেছ?’

বেদুঈনগুলো মেষ চড়াচ্ছিল। তারা জবাব দিল, সে খবর তারা জানেনা, তবে তারা জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি ক্রন্দনরত বালকের সন্ধানে এসেছ?’ একথা শুনে সাহাবীরা আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং তার বর্ণনা জানতে চাইলেন। উত্তরে ওরা বলল, ‘আমরা প্রতিদিন দেখি মাগরিবের সময় এখানে একটা ছেলে আসে, সে দেখতে এতো লম্বা, কিন্তু খুব দুর্বল, সে শুধুই কাঁদতে থাকে। আমরা তাকে খাওয়ার জন্য এক বাটি দুধ দেই, সে দুধের বাটিতে চুমুক দেয়ার সময় তার চোখের পানি টপটপ করে পড়ে মিশে যায় দুধের সাথে, কিন্তু সেদিকে তার হুঁশ থাকেনা!’ তারা জানালো চল্লিশ দিন যাবৎ ছেলেটা এখানে আছে। একটা পর্বতের গুহার মধ্যে সে থাকে, দিনে একবারই সে নেমে আসে, কাঁদতে কাঁদতে; আবার কাঁদতে কাঁদতে, আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে উপরে চলে যায়।

সাহাবারা বর্ণনা শুনেই বুঝলেন, এ থা’লাবা না হয়ে আর যায় না।
তবে তাঁরা উপরে যেয়ে থা’লাবা ভড়কে দিতে চাচ্ছিলেন না, এজন্য নিচেই অপেক্ষা করতে লাগলেন।

যথাসময়ে প্রতিদিনের মত আজও থা’লাবা ক্রন্দনরত অবস্থায় নেমে আসলেন, তাঁর আর কোনদিকে খেয়াল নাই। কী দুর্বল শরীর হয়ে গেছে তাঁর! বেদুঈনদের কথামত তাঁরা দেখতে পেলেন, থা’লাবা দুধের বাটিতে হাতে কাঁদছে, আর তাঁর অশ্রু মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাঁর চেহারায় গভীর বিষাদের চিহ্ন স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

সাহাবারা তাকে বললেন, ‘আমাদের সাথে ফিরে চল’; অথচ থা’লাবা যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি বারবার সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কি আমার মুনাফেক্বী বিষয়ক কোন সূরা নাযিল করেছে?’

সাহাবারা উত্তরে বললেন, ‘না আমাদের জানামতে এমন কোন আয়াত নাযিল হয় নাই।’

উমর (রা) বললেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তুমি যদি এখন যেতে রাজি না হও, তাহলে তোমাকে আমরা জোর করে ধরে নিয়ে যাব। রাসূল (সা) এর কথা অমান্য করবেন এমন কোন সাহাবা ছিল নাহ। কিন্তু থা’লাবা এতোটাই লজ্জিত ছিলেন যে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন নাহ। এরপর সাহাবারা তাকে রাসূল (সা) এর কাছে মদীনায় নিয়ে আসেন।

মহানবী (সা) এর কাছে এসে থা’লাবা আবারও একই প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহ কি আমাকে মুনাফিক্বদের মধ্যে অন্তর্গত করেছেন অথবা এমন কোন আয়াত নাযিল করেছেন যেখানে বলা আমি মুনাফিক্ব?’ রাসূল (সা) তাকে নিশ্চিত করলেন যে এমন কিছুই নাযিল হয়নি। তিনি থা’লাবার দুর্বল পরিশ্রান্ত মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলেন। থা’লাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এমন গুনাহগার ব্যক্তির মাথা আপনার কোল থেকে সরিয়ে দিন।’ উনার কাছে মনে হচ্ছিল যেন সে এসব স্নেহের যোগ্য নাহ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিতেই থাকলেন। আল্লাহর রহমত আর দয়ার উপর ভরসা করতে বললেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। এমন সময় থা’লাবা বললেন,

‘হে আল্লাহর রাসূল আমার এমন মনে হচ্ছে যেন আমার হাড় আর মাংসের মাঝখানে পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে।’

রাসূল (সা) বললেন, ‘ওটা হল মৃত্যুর ফেরেশতা। তোমার সময় এসেছে থা’লাবা, শাহাদাহ পড়’।

থা’লাবা শাহাদাহ বলতে থাকলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’
উনি শাহাদাহ বলতে থাকলেন... বলতেই থাকলেন... এমনভাবে তাঁর রুহ শরীর থেকে বের হয়ে গেল।
* * *
মহানবী (সা) থা’লাবাকে গোসল করিয়ে জানাজার পর কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আরো অনেক সাহাবা থা’লাবাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মহানবী (সা) পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর রাদিয়ালাহু আনহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এভাবে কেন হাঁটছেন যেন ভিড়ের মাঝে হেঁটে চলেছেন.. কতো রাস্তা ফাঁকা পরে আছে, আপনি আরাম করে কেন চলছেন না ইয়া রাসুল?’

উত্তরে রাসূল (সা) বললেন, ‘হে উমর, আমাকে অনেক সাবধানে চলতে হচ্ছে। সমস্ত রাস্তা ফেরেশতাদের দ্বারা ভরে গেছে । থা’লাবার জন্য এতো ফেরেশতা এসেছে যে আমি ঠিকমত হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না’।

সুবহান আল্লাহ !

এই সেই থা’লাবা যে ভুলক্রমে একটা ভুল করার জন্য এতো প্রায়শ্চিত্য করেছেন। গুনাহ-র কাজ করা তো দূরের কথা, গুনাহ না করেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে ব্যাকুল হয়েছেন। কত উঁচু ছিলেন তিনি আল্লাহর চোখে যে তাকে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের আগমনে রাস্তা ভরে গিয়েছিল! এই সব ফেরেশতারা নেমে এসেছে শুধু থা’লাবার জন্য, তাঁর জন্য দুআ করার জন্য, তাকে নিয়ে যাবার জন্য। আর আমরা সারাদিন জেনে না জেনে এতো ভুল করেও, এতো গুনাহ করেও অনুশোচনা করি না! উলটা আমাদের পছন্দ মত কিছু না হলেই আল্লাহর আদেশের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকি, জীবন নিয়ে নালিশ করতে থাকি।

একটা হাদীস আছে, ‘মু’মিন বান্দার কাছে তার গুনাহগুলো এমন যেন এখনই পাহাড় ভেঙ্গে তার মাথার উপর পড়বে; আর একজন দুর্বৃত্তকারীর কাছে গুনাহ এরকম যে মাছি এসে তার নাকের উপর উড়াউড়ি করছে, আর সে হাত নাড়িয়ে সেটা সরিয়ে দিল’।

[বুখারি, বইঃ৭৫, হাদীস নং ৩২০]

আমরা আমাদের গুনাহগুলোকে দেখেও না দেখার ভান করি। স্বীকার করতে চাইনা। কতো রকম যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। একটু ফ্যাশন, শখ, মনের ইচ্ছা পূরণ, মানুষের সামনে বড় হওয়া, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমরা গুনাহ-র কাজে জড়িয়ে পরি। কিন্তু আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবতে পারিনা। আমাদের যুক্তি, অহংকার, শয়তানের মতই আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা থেকে বিরত রাখে। কিয়ামতের দিন এক আল্লাহর রহমত আর দয়া ছাড়া কিছুই আমাদেরকে আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না। জান্নাত তাদের জন্যই যারা আল্লাহর কাছে মাথা নত করে। আত্মসমর্পণ করে পূর্ণভাবে। নিজের ইচ্ছা, অহম বোধের কাছে মাথা নত করেনা। তাই ঈমানদার ব্যক্তিই বিনয়ী। তার রবের সামনে কাঁদতে সে লজ্জা পায় না। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে কুন্ঠাবোধ করে না। সততার সাথে ক্ষমা চেয়ে দৃড়ভাবে সেই কাজ থেকে বিরত থাকে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, ‘যে তওবা করে এবং ঈমান আনে ও পুণ্য-পবিত্র ক্রিয়াকর্ম করে। সুতরাং তারাই, -- আল্লাহ্ তাদের মন্দকাজকে সৎকাজ দিয়ে বদলে দেবেন। আর আল্লাহ্ সতত পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা’।

[সূরাহ ফুরক্বানঃ ৭০]

আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের জেনে না জেনে করা গুনাহগুলো থেকে ক্ষমা করে দিক ! আমাদেরকে সঠিকভাবে মনের অন্তঃস্থল থেকে অনুতাপ করার, ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দান করুক। আমাদেরকে নিজেদের ভুল বুঝার আর স্বীকার করে নিয়ে খারাপ কাজগুলো থেকে দূরে থাকার তওফিক দিক... আমীন।

পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায়


ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে না। তাই রাসূলুল্লাহ মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন,..
‘‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর।’’

(মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৮১)

জুমার দিন আল্লাহ আদম (আ) কে সৃষ্টি করেন

জুমার দিন আল্লাহ আদম (আ) কে সৃষ্টি করেন
আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছ) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত স্থাপন করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি পয়দা করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর পয়দা করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি যমীনে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুম’আর দিন আসরের পর তিনি আদম (আ) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুম’আর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাখলুক আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
(সহীহ মুসলিম #৬৮৮৭)
Design by MS Design

Powered by Blogger